অন্ধকারের ছায়া
ধরন: থ্রিলার পাঠকগণ: বাঙালি দর্শক ভাষা: সহজ বাংলা
অজানা ফোনকল
ঢাকার শহরতলির এক নিরিবিলি এলাকায় বসে রুদ্র তার কম্পিউটারে পরবর্তী খবরের ওপর কাজ করছিল। চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে, রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় ধোঁয়াটে পরিবেশ। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।
“হ্যালো?” রুদ্র ফোনটা কানে নিয়ে বলল।
“আপনাকে কিছু বলতে চাই। আপনার কাছে যদি সত্য জানতে ইচ্ছা থাকে, তাহলে কাল রাত ১০টায় পুরনো ডকইয়ার্ডে চলে আসুন।”
কথাগুলো বলেই অপরিচিত কণ্ঠটা ফোন রেখে দিল। রুদ্রের মনটা কেমন করে উঠল। এমন অদ্ভুত ফোনকল আগেও পেয়েছে, কিন্তু এইবার কিছু একটা আলাদা মনে হচ্ছিল।
রাতটা নির্ঘুম কাটল রুদ্রের। পুরনো ডকইয়ার্ড? শহরের পরিত্যক্ত অংশ, যেখানে কেউ যায় না। আশেপাশে গুজব আছে যে ওখানে মানুষ হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যায়। রুদ্রের পেশাগত কৌতূহল তাকে বাধ্য করল, আর কোন দ্বিধা না করে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
Click Here
ডকইয়ার্ডে মুখোমুখি
পরের দিন রাত ঠিক ১০টা। রুদ্র ধীরে ধীরে পুরনো ডকইয়ার্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। চারপাশে অন্ধকার, শুধু দূরে কোনো একটা কুকুরের আওয়াজ ভেসে আসছে। ওখানে পৌঁছে রুদ্র দেখল একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, গায়ে কালো কোট।
“তুমি ফোন করেছিলে?” রুদ্র জিজ্ঞেস করল।
লোকটা মাথা নাড়ল। “তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় গল্পটা খুঁজে পাবে, কিন্তু সাবধান, তোমাকে অনেক কিছু ছাড়তে হবে।”
“কেন? কী হচ্ছে?” রুদ্র জানতে চাইল।
লোকটা রুদ্রকে একটি ফাইল ধরিয়ে দিল। “যদি বাঁচতে চাও, এই ফাইলের ভেতরের নামগুলো আর কখনো প্রকাশ করবে না।”
রুদ্র ফাইল খুলল। ভেতরে বেশ কিছু নাম আর তার পাশে বড় অঙ্কের টাকার হিসাব। শহরের অনেক বড় বড় নাম। রুদ্রের মাথায় যেন বজ্রপাত হল। এর মানে কী? এর পেছনে কি শুধু দুর্নীতি, নাকি আরও বড় কিছু লুকিয়ে আছে?
Click Here
বিপদের ঘনঘটা
ফাইলটা হাতে আসার পর থেকেই রুদ্র লক্ষ্য করছিল যে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। সে অফিসে, বাসায়, এমনকি রাস্তায় হাঁটলেও পেছনে কেউ যেন সর্বদা নজর রাখছে। কয়েক দিন পর, এক রাতে হঠাৎ করেই তার ঘরের জানালার কাঁচ ভেঙে গেল। দরজায় বিকট আওয়াজ। বাইরে কে বা কারা যেন ঢোকার চেষ্টা করছে। রুদ্র দ্রুত উঠে ব্যাগটা হাতে নিলো, যাতে ফাইলটা লুকানো আছে। তাকে পালাতে হবে, নাহলে সে টার্গেট হতে পারে।
বাইরে বেরিয়ে এসে সে দেখল একটি কালো ভ্যান গাড়ি তার পিছু নিয়েছে। রুদ্রের কাঁপতে থাকা হাতের মধ্যে মোবাইল, সে দ্রুত তার বন্ধু, পুলিশ অফিসার সায়মনকে ফোন করল।
“তুই কোথায় আছিস? আমাকে সাহায্য কর, প্লিজ!”
সায়মন বললঃ “আমি তোর ঠিক পেছনে আছি। দ্রুত ভেতরে আয়।”
রুদ্র কোনো রকমে সায়মনের গাড়িতে উঠল। সায়মন দ্রুত গাড়ি চালিয়ে দূরে চলে গেল। কিন্তু তাদের সামনে যে বিপদ অপেক্ষা করছে, সেটা তারা কেউই বুঝতে পারেনি। এই ফাইলের পেছনে যে আসল ক্ষমতাবান ব্যক্তিটি আছে, তার হাতে বিশাল ক্ষমতা, যা শহরের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে।
Click Here
সত্যের সন্ধানে
রুদ্র ধীরে ধীরে বুঝতে পারে যে এই ঘটনা কোনো সাধারণ দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে এক সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত, যা শহরের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের কুক্ষিগত করে রেখেছে। সায়মন আর রুদ্র মিলে সেই সত্যের সন্ধান করতে শুরু করে, কিন্তু তারা জানে না, এই রহস্যের জালে তাদের জীবন কিভাবে আরো জড়িয়ে পড়তে চলেছে।
অদৃশ্য শত্রু
সায়মনের গাড়ি দ্রুতগতিতে শহরের রাস্তাগুলো পার হচ্ছিল, কিন্তু রুদ্রের মন কোনোভাবেই শান্ত হচ্ছিল না। ফাইলটা তার ব্যাগের ভেতরে সুরক্ষিত থাকলেও, সে জানত যে এই ফাইলের কারণে তার জীবন এখন বিপদের মুখে। হঠাৎ করেই তার মনে পড়ে, ফাইলের ভেতরে কিছু অদ্ভুত নাম ছিল, যেগুলো একদম অচেনা। কিন্তু কাগজের শেষে একটি লাল কালিতে লেখা শব্দ নজর কেড়ে নিল: "অগ্নি"।
"অগ্নি? এটা কী?" রুদ্র তার নিজের মনে বিড়বিড় করল।
"অগ্নি?" সায়মন একটু চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল। "এটা একটা গোপন সংস্থা, যে অনেক বছর ধরে কাজ করছে, কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। বলা হয়, এই সংস্থাই শহরের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করে।"
রুদ্রের মনে আতঙ্ক জমতে শুরু করল। তবে কি এই 'অগ্নি' সংস্থার পেছনেই আছে সমস্ত রহস্যের মূলে? এই মুহূর্তে তার মধ্যে আরও কৌতূহল আর আতঙ্ক তৈরি হল। "তাহলে আমাদের কী করতে হবে? কীভাবে এগোব?"
সায়মন গাড়ি থামিয়ে বলল, "আমাদের প্রথমে গোপনে কাজ করতে হবে। এই ফাইলের সমস্ত তথ্য খুব সাবধানে বিশ্লেষণ করতে হবে। যারা আমাদের পেছনে আছে, তারা এত সহজে ছাড়বে না।"
Click Here
ছায়ার মানুষ
পরের দিন সকালে, রুদ্র তার অফিসের ডেস্কে বসে ফাইলের পাতাগুলো ঘেঁটে দেখছিল। হঠাৎ সে একটি ফটো পেল। ছবিটিতে তিনজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। একজন রুদ্রের কাছে পরিচিত মনে হল, কিন্তু সে নিশ্চিত হতে পারছিল না। মানুষটি ছিল শহরের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ শওকত হোসেন। বাকিরা সম্পূর্ণ অপরিচিত। কিন্তু ছবির নিচে কোনো নাম নেই, শুধু একটি লাল চিহ্ন আঁকা আছে। এটা কি সেই অগ্নি সংগঠনের সিম্বল? তার মনে প্রশ্ন আসতে থাকে।
ঠিক তখনই আবার ফোনটা বেজে উঠল। রুদ্র ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, রাত ১১টা বাজে।
"হ্যালো?"
"তুমি যা জানো, সেটা ভুলে যাও, নাহলে তোমার জীবন শেষ হয়ে যাবে।" কণ্ঠস্বরটা খুব ঠাণ্ডা ছিল।
রুদ্র বলল, "তুমি কে?"
"আমরা ছায়া। অন্ধকারের ছায়া। সত্য প্রকাশের আগে তুমি যদি বাঁচতে চাও, ফাইলটা ধ্বংস করে দাও।"
কথাগুলো শুনেই রুদ্র বুঝে গেল, কেউ তাকে ফলো করছে। সে জানালার বাইরে তাকাল, কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেল না। তবুও তার মনে হচ্ছিল, কেউ তাকে ঠিকই দেখছে।
Click Here
ফাইলের রহস্য
Click Here
নীলাঞ্জনার খোঁজ
রুদ্রের মনের মধ্যে নীলাঞ্জনার নাম ঘুরপাক খাচ্ছিল। সে বুঝতে পারছিল, এই নামটিই হয়তো রহস্যের মূল চাবিকাঠি হতে পারে। সায়মন আর সে ঠিক করল, এই নামের সন্ধান করতে হবে। তারা শহরের প্রভাবশালী কিছু লোকের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করল, কিন্তু সবাই নীলাঞ্জনার ব্যাপারে কথা বলতেই চাইছিল না।
একদিন সন্ধ্যায়, রুদ্রের কাছে আবার একটি অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এল।
"তুমি নীলাঞ্জনাকে খুঁজছ, তাই না?"
রুদ্র চমকে উঠে বলল, "হ্যাঁ। তুমি কে?"
"তোমার উত্তর পাবে কাল রাত ১২টায়। পুরনো মন্দিরে চলে আসো। কিন্তু একা আসবে।"
রুদ্র সায়মনের সাহায্য চাইল, কিন্তু সায়মন তাকে সাবধান করে দিল, "এটা একটা ফাঁদ হতে পারে। তবু যদি যেতে চাস, আমি কাছাকাছি থাকব।"
রাতের ঠিক ১২টায় রুদ্র পুরনো মন্দিরে পৌঁছাল। চারদিকে অন্ধকার, মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আর গাছপালায় ঢেকে থাকা পরিবেশ যেন পুরো ব্যাপারটাকে আরও ভৌতিক করে তুলেছে। হঠাৎ করে পেছন থেকে এক নারীকণ্ঠ শোনা গেল,
"তুমি রুদ্র, তাই না?"
রুদ্র ঘুরে তাকাল। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল এক লম্বা, ঘোমটা পরা মেয়ে। তার চোখে গভীর দৃষ্টি, আর মুখে অদ্ভুত এক কঠিন অভিব্যক্তি।
"তুমি কি নীলাঞ্জনা?" রুদ্র জিজ্ঞেস করল।
মেয়েটি হেসে বলল, "সবকিছু জানতে হলে তোমাকে আরও গভীরে যেতে হবে।"
এরপর সে এক খাম বের করে রুদ্রকে দিল। "এই খামের ভেতর আছে এমন কিছু, যা তোমাকে অগ্নি সংগঠনের আসল পরিচয় জানাবে। কিন্তু সাবধান, একবার এই পথে পা রাখলে, ফিরে আসার আর কোনো উপায় থাকবে না।"
Cleck Here
চক্রান্তের গভীরে
রুদ্র সেই খাম খুলে দেখল একটি ছোট্ট চিঠি আর একটি চাবি। চিঠিতে লেখা ছিল, "যদি সত্য জানতে চাও, পুরনো টানেলের ভেতরে গিয়ে এই চাবি ব্যবহার করো।"
পুরনো টানেল? শহরের নিচ দিয়ে চলে যাওয়া এক গোপন টানেলের কথা সে শুনেছিল, যা বহু বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। তবে কি অগ্নি সংগঠনের আসল ঘাঁটি ওই টানেলের ভেতরেই?
রুদ্র আর সায়মন ঠিক করল, সেই টানেলের ভেতরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু টানেলের ভেতরে যাওয়ার মানে ছিল অন্ধকারের গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে হয়তো তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এমন বিপদ, যা তারা কল্পনাও করতে পারেনি।
Click Here
অন্ধকারের গভীরে
রুদ্র আর সায়মন সেই রাতেই টানেলের দিকে রওনা হল। টানেলের প্রবেশপথ ছিল পরিত্যক্ত এক ভবনের নিচে। টর্চলাইট জ্বালিয়ে তারা ধীরে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করল। চারপাশে বিশাল সিলিং, পুরনো দেয়ালে ফাটল, আর জমে থাকা স্যাঁতসেঁতে গন্ধ। টানেলের ভেতর এক গভীর নিস্তব্ধতা ছিল, যেন এই স্থানটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নীরব।
হঠাৎ টানেলের মাঝপথে তারা দেখতে পেল মাটিতে একটা খাঁচার মতো কিছু। খাঁচার ভেতর লুকানো ছিল একটি দরজা, যেখানে চাবি লাগানোর জায়গা।
রুদ্র সেই চাবি বের করে দরজায় ঢোকাল। দরজাটা খুলতেই তারা দেখতে পেল একটা গোপন ঘর। ঘরের ভেতরে যা ছিল, তা দেখে রুদ্রের হাত-পা হিম হয়ে গেল।
ঘরের মাঝখানে ছিল একটি বড় মানচিত্র, যেখানে সারা শহর জুড়ে নানা চিহ্ন দেওয়া। প্রতিটি চিহ্ন ছিল এমন কিছু জায়গায়, যেখান থেকে শহর পরিচালিত হয়। অগ্নি সংগঠনের হাত যে এত শক্তিশালী, তা বুঝতে পেরে রুদ্র বুঝল, এই চক্রান্তের শেষ কোথায় তা সে নিজেও জানে না।
চলবে......!
Next part এর জন্য পরবর্তী পোস্ট দেখুন।
ধন্যবাদ...🌸🥀
Post a Comment
Leave your comment here...