অন্ধকারের ছায়া পর্ব ২
ধরন: থ্রিলার পাঠকগণ: বাঙালি দর্শক ভাষা: বাংলা
গুপ্তচর ও বিশ্বাসঘাতকতা
রুদ্র আর সায়মন যখন টানেলের গোপন ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিল, তারা দুজনেই অনুভব করল যেন কেউ তাদের অনুসরণ করছে। কিন্তু অন্ধকারের কারণে কিছুই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল না। তারা দ্রুত টানেলের বাইরে এল।
“আমাদের এভাবে চলতে থাকলে হবে না। শত্রু যত বড়, তার সাথে মোকাবিলা করতে তত বেশি বুদ্ধি আর কৌশল দরকার। আমাদের আরও লোক লাগবে,” সায়মন বলল।
রুদ্র মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। “ঠিক বলেছিস। কিন্তু কাকে ভরসা করব? এই শহরের অনেকেই ‘অগ্নি’র পক্ষে কাজ করে।”
সায়মন চিন্তায় পড়ে গেল। "আমাদের প্রয়োজন একজন ভেতরের লোক। যে অগ্নির সদস্য, কিন্তু তাদের প্রতি পুরোপুরি বিশ্বস্ত নয়।"
“কিন্তু এমন একজনকে আমরা কোথায় পাব?” রুদ্রের প্রশ্নের জবাবে সায়মন একটি নাম বলল, “ফারহান। সে একসময় পুলিশের ইনফর্মার ছিল। ওর কাছ থেকে আমরা কিছু তথ্য পেতে পারি।”
তারা ফারহানের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল। ফারহান ছিল শহরের অপরাধজগতের একজন পুরনো চরিত্র, যার উপর কারও বিশ্বাস নেই। কিন্তু সে সবসময় টাকার বিনিময়ে তথ্য সরবরাহ করত। রুদ্র জানত, ফারহানকে টাকা দিলে কথা বলবে, কিন্তু তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ ছিল।
তাদের কয়েক ঘণ্টা পরে পুরনো একটি বারের পেছনে ফারহানের সাথে দেখা হলো। ফারহান প্রথমে রুদ্রকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো, কিন্তু যখন রুদ্র টাকা দেখাল, তখন সে একটু নরম হল।
“তুই তো বেশ সাহসী, রুদ্র। ‘অগ্নি’র মতো বড় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে চলেছিস?” ফারহান হেসে বলল।
রুদ্র সোজাসাপ্টা বলল, “তোর কাছে তথ্য চাই। ওদের ভেতরের কোনো গোপন তথ্য জানাস?”
ফারহান চুপ করে রইল কিছুক্ষণ, তারপর বলল, “অগ্নি সংগঠনের সব কিছু গোপন। কিন্তু আমি জানি, তাদের মধ্যে অনেক দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিশেষ করে ‘নীলাঞ্জনা’ নামের একজন সদস্য। সে যেন পুরো সংগঠনের ওপর একটা ছায়ার মতো রয়েছে। কিন্তু সাবধান, যদি তার নামে কোথাও কিছু শোনাস, জানবি বড় কিছু ঘটতে চলেছে।”
রুদ্র আর সায়মন ফারহানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে এল। তারা জানত, ফারহানের কথা একশ ভাগ সত্য নাও হতে পারে, কিন্তু নীলাঞ্জনার ব্যাপারে নতুন তথ্য তাদের আরও কৌতূহলী করে তুলেছিল। নীলাঞ্জনা কেবল একজন সদস্য নয়, সে হয়তো পুরো সংগঠনের কেন্দ্রীয় শক্তি।
Click Here
নীলাঞ্জনার অজানা ইতিহাস
রুদ্র যখন পুরনো ফাইলগুলোর আরও গভীরে ঢুকে পড়ল, তখন সে একটি পুরনো পত্রিকার কাটিং পেল। সেখানে একটি অদ্ভুত দুর্ঘটনার কথা লেখা ছিল, যা ১৫ বছর আগে ঘটেছিল। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল এক বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং তার স্ত্রী, কিন্তু তাদের কন্যা বেঁচে যায়। সেই কন্যার নাম ছিল—নীলাঞ্জনা।
রুদ্র এবার পুরোপুরি নিশ্চিত হল যে নীলাঞ্জনার সঙ্গে এই ষড়যন্ত্রের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সে কীভাবে অগ্নি সংগঠনের সাথে জড়িত হল? এবং তার পরিবারকে হত্যার পেছনেই বা কারা ছিল?
রুদ্র জানত, এই তথ্যগুলো জানার জন্য তাকে সরাসরি নীলাঞ্জনার মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু নীলাঞ্জনাকে খুঁজে পাওয়া এত সহজ ছিল না। তার কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই, এমনকি তার ছবি পর্যন্ত বিরল। নীলাঞ্জনা যেন এক ধূম্রছায়ার মধ্যে বাস করে।
Click Here
আড়ালের খেলোয়াড়
এই সময়ে রুদ্রের জীবনে আরও একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। রাত্রিবেলা তার অ্যাপার্টমেন্টের দরজায় একজন অচেনা লোক এসে দাঁড়ায়। লোকটি দেখতে একেবারে সাধারণ, কিন্তু তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত তীক্ষ্ণতা।
“আমার নাম আবির,” লোকটি বলল। “তুমি আমার সম্পর্কে কিছু জানো না, কিন্তু আমি তোমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানি।”
“তুমি কে?” রুদ্র প্রশ্ন করল।
“আমি সেই ব্যক্তি, যে নীলাঞ্জনাকে অনুসরণ করছে। আমি অগ্নি সংগঠনের ভেতর থেকেও তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছি। আমাকে বিশ্বাস করো।”
রুদ্র বিভ্রান্ত হয়ে গেল। "কিন্তু কেন তুমি এটা করছ?"
আবির গভীর স্বরে বলল, “অগ্নি শুধু একটি অপরাধমূলক সংগঠন নয়। তাদের উদ্দেশ্য আরও বড়, এবং তা শুধুই ক্ষমতা বা অর্থ নয়। তারা এক অশুভ উদ্দেশ্যে কাজ করছে। আমি নীলাঞ্জনাকে সাহায্য করছি, কারণ ও নিজেও জানে না, কীভাবে এই গোষ্ঠীর ভেতরে আটকে গেছে।”
আবিরের কথা শুনে রুদ্রের মাথায় নতুন প্রশ্ন জমতে থাকল। নীলাঞ্জনা কি সত্যিই এই সব ষড়যন্ত্রের পেছনে নাকি সে নিজেই কোনো বড় চক্রান্তের শিকার?
Click Here
শত্রু থেকে মিত্র
নীলাঞ্জনার সাথে আরেকটি গোপন মিটিং ঠিক করল রুদ্র, যেখানে আবিরও তার সাথে থাকবে। এবার নীলাঞ্জনা আসল সত্যের কিছুটা উন্মোচন করল।
“আমি জানি অগ্নি আমাকে ব্যবহার করছে। আমি জানি না কেন, কিন্তু আমি এই নোংরা খেলায় আটকে আছি। আমার পরিবারের মৃত্যুর জন্য তারাই দায়ী। আমি জানি না কে এই সংগঠন চালায়, তবে কেউ একজন পুরো শহরের ওপর শাসন করছে।”
নীলাঞ্জনা এবার আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি আমার পিছু নিয়েছ, কিন্তু আমি জানি তুমি সাহায্য করতে চাও। আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।”
রুদ্র বুঝতে পারল, এখন শুধু অগ্নির বিরুদ্ধে লড়াই নয়, তাকে এমন কিছু করতে হবে যা অগ্নির পুরো শক্তিকে ভেঙে দিতে পারে।
Click Here
চূড়ান্ত সংঘাতের প্রস্তুতি
রুদ্র, সায়মন, নীলাঞ্জনা আর আবির মিলে একটি পরিকল্পনা তৈরি করল। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল অগ্নি সংগঠনের আসল নেতা কে, তা খুঁজে বের করা এবং তার ক্ষমতার মূল শিকড়গুলো ছিন্ন করা। তবে তারা জানত, এই লড়াইয়ে তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে।
"অগ্নির চূড়ান্ত কেন্দ্রে ঢুকতে হবে," আবির বলল। "ওরা যে জায়গাটা সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত করে রেখেছে, সেটা হলো শহরের বাইরে একটি বিশাল অট্টালিকা। সেখানেই তাদের মূল বৈঠক হয়, আর সেখানেই রয়েছে সব গোপন তথ্য।"
তারা বুঝতে পারল, এই শেষ অভিযান হতে পারে তাদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। তবে আর পেছনে যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না।
Click Here
অগ্নির দুর্গে
রাত্রির শেষ প্রহরে রুদ্র আর তার সঙ্গীরা অগ্নি সংগঠনের দুর্গের দিকে এগোতে লাগল। তারা জানত, এটা আত্মহত্যার সমান, কারণ শত্রু সবদিক থেকেই প্রস্তুত। কিন্তু তারা বিশ্বাস করেছিল যে, একবার সেখানে ঢুকতে পারলে, অগ্নির পুরো ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হবে।
গোপনে প্রবেশ করে, তারা দুর্গের ভেতর ঢুকে গেল। কিন্তু তাদের উপস্থিতি অগ্নির লোকদের নজর এড়িয়ে যায়নি। ধীরে ধীরে তারা প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে লাগল। গোপন সিসিটিভির ফুটেজ থেকে জানা গেল, অগ্নি সংগঠনের নেতা আর কেউ নয়, শহরের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি—শওকত হোসেন।
Click Here
আসল চেহারা
অবশেষে, রুদ্র এবং তার সঙ্গীরা শওকত হোসেনের গোপন ঘরে পৌঁছল। সেখানে শওকত হোসেন দাঁড়িয়ে ছিল এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
“তোমরা সত্যিই সাহসী। কিন্তু আমার মতো মানুষকে ধরার চেষ্টা করো না। আমার ক্ষমতা এই শহরের সীমা ছাড়িয়ে যায়,” শওকত হেসে বলল।
রুদ্র এক পা এগিয়ে এসে বলল, “তুমি যা করেছ, তার জন্য শাস্তি পাবে। তোমার সময় শেষ।”
Click Here
চূড়ান্ত দ্বন্দ্ব
শওকত হোসেনের মুখে ছিল এক বিজয়ী হাসি। তার চারপাশে দাঁড়ানো ছিল বেশ কিছু অস্ত্রধারী গার্ড। কিন্তু রুদ্র, সায়মন, নীলাঞ্জনা এবং আবির পিছপা হল না। রুদ্রের চোখে ছিল প্রবল ক্ষোভ, কারণ শওকতের কারণে তার বন্ধুদের প্রাণ হুমকির মুখে।
“তুমি যদি সত্যি এতটাই ক্ষমতাশালী হও, তাহলে কেন এভাবে গোপনে লুকিয়ে আছ? তোমার সাম্রাজ্য টিকবে না,” রুদ্র ঠান্ডা গলায় বলল।
শওকত হোসেন হাসতে হাসতে বলল, “তুমি বুঝতে পারছ না, আমি শুধু একটি পুতুল, কিন্তু আমার পেছনে রয়েছে আরও বড় শক্তি। অগ্নি কেবল একটি নাম, এর শিকড় অনেক গভীরে। তুমি ভাবছ, আমার মৃত্যুর সাথে সব শেষ হবে? না, এটা কেবল শুরু।”
শওকতের কথায় রুদ্র থমকে গেল। যদি শওকত শুধু এক পুতুল হয়, তাহলে আসল নেতা কে? কাদের দ্বারা অগ্নি সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে?
ঠিক তখনই শওকতের হাতে ধরা একটি রিমোট কন্ট্রোল দেখা গেল। সে বলল, “তোমাদের জন্য আমার শেষ উপহার। এখান থেকে আর কেউ বাঁচতে পারবে না।”
শওকত বোমার মতো কিছু ফেলে পালানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু আবির দ্রুত তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রিমোটটা ছিনিয়ে নিল। দুজনের মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হলো।
এই সুযোগে রুদ্র ও সায়মন শওকতের গার্ডদের মোকাবিলা করতে লাগল। বন্দুকের গুলি চলছিল, আর রুমের চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছিল। নীলাঞ্জনা ছুটে গিয়ে একটি গোপন দরজা খুঁজে বের করল, যেখান দিয়ে সবাই বেরিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু রুদ্র জানত, শওকতকে এখানেই থামাতে হবে, নাহলে সে পালিয়ে গিয়ে আবার শহরের অন্ধকারে মিশে যাবে।
“তুমি পালাতে পারবে না, শওকত!” রুদ্র চিৎকার করে বলল, এবং সে শওকতের দিকে গুলি ছুড়ল। শওকত আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে গেল।
শওকত নিস্তেজ গলায় বলল, “তোমরা জিতেছ, কিন্তু যা ঘটছে, সেটা তোমাদের কল্পনার বাইরে।”
রুদ্র শওকতের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার খেলা শেষ, শওকত। তোমার মতো লোকেরা শহরের অন্ধকার নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, কিন্তু আমরা সেই অন্ধকার দূর করব।”
Click Here
অগ্নির পতন
শওকত হোসেনের মৃত্যুর পর, পুলিশের কাছে সমস্ত প্রমাণ তুলে দেয়া হলো। অগ্নি সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে তল্লাশি শুরু হলো, অনেককে গ্রেপ্তার করা হলো। শহর ধীরে ধীরে শওকতের শাসন থেকে মুক্তি পেতে শুরু করল। রুদ্র, সায়মন, নীলাঞ্জনা এবং আবিরের প্রচেষ্টায় অগ্নি সংগঠন ভেঙে গেল।
কিন্তু রুদ্রের মনে এখনও কিছু প্রশ্ন ছিল। শওকত বলেছিল যে, সে শুধু একজন পুতুল, কিন্তু আসল শক্তি কার হাতে? এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এবং নীলাঞ্জনা? তার কি আসলেই মুক্তি হয়েছে, নাকি সে এখনও অগ্নির কোনো এক জটিল ফাঁদে আটকে আছে?
নীলাঞ্জনা একদিন রুদ্রকে বলল, “তুমি হয়তো শওকতকে পরাজিত করেছ, কিন্তু অগ্নি এখনও শেষ হয়নি। আমি জানি, একদিন ওরা আবার ফিরে আসবে। আর তখন আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”
রুদ্র চুপ করে নীলাঞ্জনার কথা শুনল। তার মনে শওকতের শেষ কথাগুলো বাজছিল—“এটা কেবল শুরু।” তাহলে কি আসল ষড়যন্ত্র এখনো সামনে আসেনি?
ছায়ার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া
কয়েক সপ্তাহ পরে, শহর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল। রুদ্র আর সায়মন তাদের কাজের জন্য প্রশংসিত হল। কিন্তু রুদ্রের মনে একটা অস্বস্তি রয়ে গেল। একদিন সকালে, সে এক অচেনা চিঠি পেল। চিঠিটা খোলার সাথে সাথেই তার চোখ বড় হয়ে গেল। ভেতরে ছিল নীলাঞ্জনার ছবি, আর নিচে লেখা ছিল একটাই শব্দ—“অগ্নি”।
রুদ্র বুঝল, খেলা এখনও শেষ হয়নি। নীলাঞ্জনা কোথাও হারিয়ে গেছে, আর অগ্নি আবারও ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। শওকতের পরেও কেউ অন্ধকার থেকে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।
সেই মুহূর্তে রুদ্র প্রতিজ্ঞা করল, সে থামবে না। যতক্ষণ না সত্যের শেষ পর্দা উন্মোচিত হয়, সে লড়াই চালিয়ে যাবে। অগ্নি হয়তো আজ হেরে গেছে, কিন্তু কাল আবার তাদের ছায়া শহরের ওপর ঘনিয়ে আসতে পারে।
রুদ্র জানত, তার যাত্রা এখনও শেষ হয়নি। শহরের অন্ধকারের গভীরে আরও বড় কোনো ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। এবং সেই অন্ধকারের বিরুদ্ধে তাকে একাই দাঁড়াতে হবে।
"শেষ"
ধন্যবাদ...🌸🥀
Post a Comment
Leave your comment here...